বড় প্রকল্পের চেয়ে ছোট, গ্রামীণ ও কল্যাণমুখী প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। এসব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিত করতে সম্ভাব্যতা যাচাই ভালোভাবে করতে হবে। এছাড়া বিলাসী পণ্য এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তহবিলের অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার, আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনসহ কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে আরও সাবধান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে কঠোর হতে হবে। প্রকল্প থেকে আয়েশি আইটেম বাদ দিতে হবে। এটা পরিকল্পনা কমিশন করছে। কিন্তু এ কাজ আরও ভালোভাবে করে যেতে হবে। তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, অফিসে বা বাড়িতে বিলাসী পণ্য ব্যবহার কমাতে হবে। কৃষিতে জোর দিতে হবে। চাল, ডাল, মুরগি, সবজি, মাছসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ডিসিদের ঘুরে ঘুরে আবাদি জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। জমিতে মানুষকে চাষাবাদে উৎসাহিত করতে বলেছেন।
সেই সঙ্গে সন্দ্বীপে সবার আগে জেটি নির্মাণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষি আমাদের প্রাণ। তাই আন্তর্জাতিকভাবে অবস্থা খারাপ হলেও কৃষি যদি ঠিক থাকে আমরা খেয়ে চলতে পারব। বর্তমানে মাঠে আমন ধান সোনালি রং ধারণ করেছে। আশা করছি ভালো হবে। বাংলাদেশ এখন কঠিন সময় পার করছে। এটা মোকাবিলা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্ব পরিস্থিতির শিকার।’
তিনি বলেন, আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ থেকে বেরিয়ে এসেছে; কিন্তু আমরা এখন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী তাই ডেঙ্গি জ্বরের প্রাদুর্ভাব কমাতে বাসা-বাড়ি ও অফিস-আঙিনা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, একনেকে আমরা একটা অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। সেখানে বলেছি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো আছে। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে রেমিট্যান্স যা এসেছে, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি। রপ্তানি গত চার মাসে ১৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং রপ্তানি বেড়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এ বছর এসেছে ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার। এলসি খোলার পরিমাণ ১৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন হয়েছে। যেটা গত অর্থবছর হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এলসি কম খোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজার্ভের হিসাব ঠিকে আছে। আইএমএফ একমত হলো কি না তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ইভিএম প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম বিভাগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনে ফেরত দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করে তারপর আবার প্রস্তাব পাঠাবে নির্বাচন কমিশন।
একনেক ৭ প্রকল্প অনুমোদন : বৈঠকে ৭ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৩২২ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ; এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪-এর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামোসহ অঞ্চল-২, অঞ্চল-৫-এর সার্ভিস প্যাসেজগুলোর উন্নয়ন; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থার সম্প্রসারণ; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এছাড়া ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানো প্রকল্পগুলো হলো-খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। বরিশাল মেট্রোপলিটন ও খুলনা পুলিশ লাইনস নির্মাণ প্রকল্প এবং গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প।