Home ৬৪ জেলা কাগজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি, মূদ্রণ শিল্পে অশনি সংকেত

কাগজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি, মূদ্রণ শিল্পে অশনি সংকেত

নিউজ ডেস্ক

by Nahid Himel

গত কয়েকদিন ধরে কাগজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মূদ্রণ শিল্পে অস্থিরতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দাপ্তরিক কাজে ব্যয়বৃদ্ধিসহ, শিক্ষার্থীর অভিভাবকগনের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কাগজ বিক্রেতারা জানান, কোম্পানীগুলি নানা সমস্যা দেখিয়ে কাগজ উৎপাদন কমিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে বাজারে কাগজের ঘাটতি দেখা দেওয়ার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনাকালীন সময়ের পর থেকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাগজের সংকট দেখা দেওয়ায় কাগজের দাম বাড়তে থাকে। পরে আস্তে আস্তে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও গত কয়েদিন যাবৎ কাগজের দাম আস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিছু দিনের ব্যবধানে প্রতি এক রীম কাগজে প্রায় এক হাজার টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন আগেও ৫৫গ্রাম ডাবল ডিমাই সাইজের এক রীম কাগজের দাম ছিল ১৪ থেকে ১৫শ টাকা।

বর্তমানে এই কাগজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২৪শ টাকা দরে। একই সাইজের ১৮শ টাকার ৬৫ গ্রাম কাগজ বিক্রি হচ্ছে ২৮শ টাকা দরে, ২ হাজার টাকার ৭০ গ্রাম কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দরে। ২২শ টাকার ৮০ গ্রাম কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ টাকা দরে। ১০০গ্রামের রিয়েল আর্ট পেপার এক রীম বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫হাজার টাকা দরে। প্রতিনিয়ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূদ্রণ শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ময়মনসিংহের মোহনা প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী হাজী মাজহারুল ইসলাম খোকন বলেন, বাজারে কাগজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ কমে যাচ্ছে। এটা মূদ্রণ শিল্পের জন্য অশনি সংকেত।

কাগজের মুল্যবৃদ্ধি রোধ করা না হলে মুদ্রণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্তসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিপাকে পড়বে। কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দাপ্তরিক কাজে। বর্তমানে কওমী মাদরাসা গুলিতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল শুরু হচ্ছে। কিছুদিন পরই শুরু হবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা।

ফলে বর্তমানে কাগজের চাহিদা ব্যাপক। এই মুহুর্তে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার খরচ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সীমিত ফি নেওয়া হয়। পরীক্ষার আগ মুহুর্তে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাগজের ব্যয়ভার বহন করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সমস্যায় পড়তে হবে। তাছাড়া কাগজ সংশ্লিষ্ট নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরন বই, খাতার দামও বেড়ে যাওয়ার শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও পড়ছেন বিপাকে।

শিক্ষার্থী অভিভাবক চরপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম চন্দন বলেন, কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়র খরচ বেড়ে যাবে যা পরিবারে প্রভাব ফেলবে। প্রিন্টিং শাখার আরও একটি ক্ষেত্র পিভিসি প্রিন্টের মিডিয়ারও সংকট দেখা দিয়েছে। গত দু এক একদিনের ব্যবধানে এ সব মিডিয়ার প্রতি বর্গফুটে ৮ থেকে ১০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলসি সংকটের কারনে বিদেশ থেকে মিডিয়া আমদানি করতে পারছেননা বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ফলে এ শিল্পেও সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও হিমশিম খাচ্ছে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এক দফা দাম বাড়িয়েও সস্তিতে নেই পত্রিকা মালিকগণ।

দেশের বৃহৎ কাগজের মিল বসুন্ধরার ময়মনসিংহের পরিবেশক ইউনিক পেপার হাউজের প্রতিনিধি পল্লব সাহা বলেন, গ্যাস সংকট, এলসির সংকটের কথা বলে কোম্পানীগুলি কাগজ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তাই বাজারে কাগজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোম্পানীগুলি থেকে কাগজ বেশি দামে কিনে আনতে হয় বিধায় আমাদেরকেও বেশিদামে বিক্রি করতে হয়।ময়মনসিংহ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুখ খান পাঠান বলেন, বর্তমানে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। আর সংকটের কারনে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজের পরিধি সংকুচিত হওয়ার আশংকা বিরাজ করছে। তাই কাগজের সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে মূল্য স্থিতিশীল রাখার দাবী জানান তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Comment