ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশ ডেকেছিলাম। তার সবশেষ কর্মসূচি হচ্ছে ঢাকায়। এটা তো একটা সমাবেশ। এটা কোনো চূড়ান্ত আন্দোলন নয়, স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
ঢাকা থেকে হয়তো পরবর্তী কর্মসূচি, দাবি-দাওয়াসহ আরও বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে জনগণের সামনে আসব। অথচ এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা, মন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে মনে হয় ১০ ডিসেম্বর একটি যুদ্ধ হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এইটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, এমন কোনো কর্মসূচি আমরা নেব না, যাতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিপদগ্রস্ত হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আর শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাব।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকায় গণসমাবেশ চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি বিভাগীয় সমাবেশ। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সব হীন চক্রান্তকে ব্যর্থ করে জনগণ তাদের ন্যায্য দাবিতে সমবেত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে সোচ্চার হবে। একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে বানচাল করার চেষ্টা করা হলে জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ গণসমাবেশ সফল করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, শত বাধা-বিপত্তি, আক্রমণ, নির্যাতন সহ্য করেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগোচ্ছি। শান্তিপূর্ণ পথে এগোচ্ছি। এই অবৈধ সরকার তারা অত্যন্ত অর্বাচীনের মতো এই দেশকে একটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা একটা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আবার সেভাবে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
প্রতি মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দুঃস্বপ্ন দেখে-এই মুহূর্তে বুঝি গেল, সব গেল। ওই আতঙ্কে তারা এখন আবার রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে-ছেড়ে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া হবে না, দেখে নেওয়া হবে। আরে! তোমরা কি গুন্ডা বাহিনীর সর্দার? তোমরা কি মাফিয়ার সর্দার?’
‘হেফাজতের পরিণতি হবে বিএনপির’-ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেই অবস্থা এখন আর নেই। হেফাজতের সময়ে তারা যেটা করেছেন এখন জনগণের সঙ্গে সেটা করতে পারবেন না। কারণ জনগণ তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে। জনগণ যে কোনো মূল্যে এবার তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে।’
নির্বাচন নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাপানি রাষ্ট্রদূত চরম সত্য কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির চোখ খুলে গেছে, তারাও দেখতে পাচ্ছেন এখানে কী হচ্ছে।’
শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে দুর্ভাগ্যক্রমে ক্রিকেটার সাকিবের নামও যুক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক রথী-মহারথী শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। ব্যাংক তো শেষ। বারবার সেন্ট্রাল ব্যাংক বলছে, না ব্যাংকে কোনো তারল্য সংকট নেই। না থাকলে তাকে স্টেটমেন্ট দিতে হবে কেন? মানুষ ভয় পাচ্ছে কেন? কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন জায়গায় চলে গেছে, মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। ওখান থেকেই টাকা চুরি হয়ে যেতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে রিজার্ভের কথা এত বলে কেন? তারা রিজার্ভের টাকা বের করে নিয়ে গেছে এবং বিদেশে রিজার্ভের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে-কৌশলে বাড়িঘর, অ্যাসেট সব তৈরি করেছে।’
জঙ্গিবাদকে বাংলাদেশের জন্য একটা ইস্যু তৈরির চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা চিকিৎসক। অথচ আমরা তো জঙ্গি দেখি না। এটা সরকারের পুরোনো অস্ত্র, তাতে কাজ হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে বিভাগীয় সমাবেশে বাধা প্রদান, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার, গ্রেফতার, মামলা-হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।