রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দুই দিনব্যাপী একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সফর নিয়ে কূটনৈতিক মহলে নানা কৌতূহল তৈরি হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে তার সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন। রাশিয়া আইওআরএ-এর সদস্য না হলেও পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইওআরএ-এর সম্মেলনে যোগ দিলেও এই সফর অনেকটা দ্বিপক্ষীয় সফরের মতোই গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ মস্কোর সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি, সার ও জ্বালানি সংকট নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া বৈশ্বিকভাবে চাপে থাকলেও দেশটির সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ল্যাভরভ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আলাদা বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হতে পারে। রূপপুর পরমাণু প্রকল্প, রোহিঙ্গা সংকট, জ্বালানি তেল আমদানি, খাদ্যশস্য ও সার আমদানি এবং বৈশ্বিক রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন সংঘাত ঘিরে রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পটি ঝুলে যাবে কিনা- এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সময়মতোই রূপপুর প্রকল্প শেষ হবে। তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে রূপপুর প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে।
রূপপুর প্রকল্প ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকটে বন্ধু দেশ হিসেবে রাশিয়াকে পাশে পেতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে আসছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়া যেন বাংলাদেশের পক্ষে থাকে, সেই আহ্বান জানানো হয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উত্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে জ্বালানির বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ায় রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে আগ্রহী বাংলাদেশ। রাশিয়া থেকে সরাসরি তেল ক্রয়ে নানা বাধা থাকলেও প্রয়োজনে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা সংগ্রহ করতে চায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ নানা উপায়ও খুঁজছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা রাশিয়াকে আরও কাছে পেতে চাই। সে বিষয়টি তুলব। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশে রাশিয়ার রূপপুরসহ বিভিন্ন প্রকল্পে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে তা নিয়েও আলোচনা হবে বলে আমরা আশা করি। জ্বালানি ও খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান চেয়ার বাংলাদেশ। ২৩ সদস্য দেশের এই সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আগামী ২৩-২৪ নভেম্বর ঢাকায় শুরু হচ্ছে। এই সম্মেলনে যোগ দিতেই তিনি ঢাকা আসছেন।
আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা আসছেন ৷৷ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে
নিউজ ডেস্ক
previous post