টানা তিন বছর ধরে আয়কর মেলার আয়োজন করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করদাতাদের সুবিধায় মেলার পরিবর্তে এনবিআরের অধীন সারা দেশে ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে মেলার মতো উৎসবমুখর পরিবেশে রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। মেলার সব সুযোগ-সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে কর অঞ্চলগুলোতে।
অনলাইন পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ থাকায় এবার বেশ সাড়া পড়েছে অনলাইনে রিটার্ন জমায়।
মাসব্যাপী আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। এবার রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এনবিআর। যার কারণে কর অঞ্চলগুলোতে এত দিন তেমন ভিড় না থাকলেও শেষ দিকে এসে রিটার্ন জমা দিতে উপচে পড়া ভিড় ছিল করদাতাদের। ভিড় থাকলেও করদাতাদের রিটার্ন জমা দিতে ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভিন্ন কর অঞ্চল ঘুরে এসব দেখা গেছে। কর অঞ্চল-৪-এ গিয়ে দেখা যায়, রিটার্ন জমা দিতে প্রতিটি বুথেই করদাতারা ভিড় করছেন। এই কর অঞ্চলে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা আয় কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন।
মহাখালীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সিনিয়র নার্স নাজমুল হোসেন কর অঞ্চল-৪-এ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শেষ সময়ের কারণে প্রতিটি বুথেই ভিড় বেশি। তবে কর কর্মকর্তারা দ্রুত সময়ে ও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন। মেলা না হলেও মেলার চেয়ে সুন্দর পরিবেশে রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। ’
ওই কর অঞ্চলে রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আনিছুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রিটার্ন জমার শেষ দিকে প্রতিবারই ভিড় থাকে, তার পরও মানুষ শেষ দিকেই এসে জমা দিতে চায়। তবে এবার বেশি সময় লাগেনি। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই জমা দিতে পেরেছি। জমা দিতে কোনো রকম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি। ’ তিনি বলেন, ‘আগে অফডের দিন (শুক্র-শনিবার) মেলায় রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখানে এই সুযোগটি নেই। তাই আমি চাই আগামী বছর থেকে যেন মেলার আয়োজন করা হয়। ’
কর অঞ্চল-৪-এর ৬ নম্বর বুথের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার রিটার্ন জমার পরিমাণ বেশি। শেষ দিকে ভিড় বাড়বে সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিয়েছি। যার কারণে ভিড় থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যেই করদাতারা রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। ’
কর অঞ্চল-৬-এ গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিটি বুথের সামনে ভিড় করে করদাতারা আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছে। কর অঞ্চল-৬-এ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ‘মাসের শেষ দিক হওয়ায় ভিড় বেশি, যার কারণে রিটার্ন জমা দিতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। তবে মেলার মতোই আমরা কর অঞ্চলে সেবা পেয়েছি। কোনো অংশেই মেলার চেয়ে কম না। কর্মকর্তারাও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন। ’
কর অঞ্চল-৬-এর কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘মূলত গত সপ্তাহ থেকেই ভিড় বাড়ছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমাদানে তেমন ভিড় ছিল না। শেষ দিকে এসে প্রচুর চাপ বাড়ছে। এটি শুধু এবার নয়, প্রতিবছর শেষ দিকে এসে এমন ভিড় হয়। ’
কর অঞ্চল-১২-তে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসা করদাতাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। ওই কর অঞ্চলের পঞ্চম তলায় রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। ওরিয়ন গ্রুপে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত গোলাম মোস্তাফা কর অঞ্চল-১২-তে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রিটার্ন দিতে হয়েছে। এটি আমাদের অলসতার কারণেই হচ্ছে। এক মাসের মেলা হলেও আমরা সবাই শেষ মুহূর্তে এসে ভিড় করছি। তাই একটু সময় লাগছে। ’
কর অঞ্চল-১২-এর কর কর্মকর্তা মো. মিলন খান বলেন, ‘এবার শেষ দিকে রিটার্ন জমার চাপ বেশি। মূলত গত বুধবারের আগে কোনো রকম ভিড় ছিল না। গতবছরের চেয়ে এবার রিটার্ন জমাও পড়ছে বেশি। ’
এনবিআর ইনকাম ট্যাক্স শাখার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। অনলাইনে রিটার্ন জমার সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজারের বেশি। এবার রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না তা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ তবে এনবিআর এবার রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়ানোর পক্ষে নয় বলেও তিনি জানান।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮০ লাখ টিআইএনধারী আছেন। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা ও করের ওপর বিলম্ব সুদ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিজের সার্কেলের উপ-কর কমিশনারের কাছে আবেদন করে সময় নিতে হবে। কিন্তু আবেদন না করলে তাঁকে প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা এক হাজার টাকার মধ্যে যা বেশি, ওই পরিমাণ অর্থ এবং প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়।
kalerkantho